মুছে গেছে সব, দেনা-পাওনার স্মৃতি

November 22, 2008

কদিন আগে আমি বাংলা নাটকের বিরাট পোকা হয়ে গিয়েছিলাম। অনলাইন-এ বাংলা নাটকের অভাব নেই, দেখে শেষ করা যায়না এইরকম অবস্থা। গত ক’বছর হল বাংলা নাটক সেই পুরাতন আদল ভেঙ্গে একটু একটু করে বেরিয়ে অসতে পারছে। এখন নাটক মানেই পুতু পুতু জ্ঞানের কথা আর তরুণ-তরুণীর ভালবাসা এবং দেশপ্রেম বিষয়ক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উপদেশ-বানী না। এখন বাংলা নাটক অনেক সাবলীল, অনেক স্বাভাবিক এবং অনেক বাস্তবমুখী। কদিন আগে একটা বাংলা নাটকে ‘বাল’ শব্দটার বিশেষ ব্যাবহার দেখলাম। অবশ্যই গর্বিত হবার মত কোন বিষয় না। আমরা চাইনা আমাদের নাটকে অশালীন শব্দের ব্যাবহার থাকুক। কিন্তু ভালো লাগল এই পরিবর্তন দেখে। এখনকার নাটকে সাধারণ জীবনের প্রতিফলন থাকছে। আমি কোনদিন কোন মাস্তান-গুণ্ডাকে বলতে শুনিনি, “এই! তুই আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছিস কেন রে শয়তান! আমি কিন্তু এখন তোর চোখ তুলে ফেলব, দুষ্টু” – বরং বলতে শুনেছি, “ওই বাল! তুই আমার দিকে তাকাইয়া কি দেখস? চেহারা মাপতাছছ? চউখ গাইলা দিমু হাউয়ার পোলা, চিনস আমারে” – এখন নাটক মানেই, “আমি এসেছি, তুমি এসেছিলে? তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবোনা, বুঝতে পেরেছ?”- না। এখন নাটক মানে, “আমি আসছি, তুমি কই? গেলে যাওগা, কতো জিনিসআইলো-গেলো, এত ভাবার টাইম নাই মামা”।

আমি জানি আমি হয়ত একটু বাড়িয়ে বলছি, কিন্তু আসলেও ইদানীং নাটক দেখে অনেক মজা পাই। ‘হাউস-ফুল’ একটা নাটক, সেটার সাথে-তো আমি একদম গেঁথে আছি গত কদিন ধরে। ছেলে লেখাপড়া করছে না, মা এসে কান ধরে গদাম করে এক চড় বসালেন, দেখেই ভালো লাগায় মনটা ভরে যায় আমার, কারণ এই চড়টা আমিও খেয়েছি, মায়ের এই রণমুর্তী আমাকেও দেখতে হয়েছে। আমি বলছি না লেখাপড়া না করলে শিশুদের চড়-থাপ্পড় মারা উচিত, তবে শিশুদের চড় দেয়ার প্রচলন থাকলে নাটকেও সেটা দেখানোর সাহস থাকা উচিত। আমরা যেই ভাবে কথা বলি, এখনকার অনেক নাটক সেইভাবে কথা বলে। আমাদের ভাল লাগে। নাটক কেন সব সময় শুদ্ধ, পরিমেয়, উন্নত-রুচির হতে হবে, যেখানে আমাদের আশেপাশে তথাকথিত সেইসব উন্নত রুচির মানুষ মাত্র হাতে গোনা ক’জন এবং যারা জ্ঞানের কচকচানি ছাড়া আমাদের বিশেষ আর কিবা দিতে পেরেছেন! অর্থহীন কিছু, “এটা করো না, ওটা করো না, এটা সুস্থ, ওটা অসুস্থ, তোমরা বুঝ না, আমরা বুঝি, তোমরা জান না, আমরা জানি” এই মায়াজালে আটকে রাখতে চেয়েছেন আমাদের সারা-বেলা। সবাই অসভ্য হয়ে যাক এটা আমাদের কাম্য না, তবে সবাই স্বাভাবিক হউক, এটা আমরা অবশ্যই চাইতে পারি।

সব থেকে বিরক্ত লাগে গ্রামের নাটক দেখতে। গ্রামের নাটক মানেই একদল সহজ-সরল মানুষ, যারা খুব গুছিয়ে কোন একটা বিশেষ আঞ্চলিক ভাষায় টেনে টেনে বিরাট বিরাট সব ভাবের কথা বলেন। একজন থাকেন চেয়ারম্যান সাব, যিনি একাই দুষ্টের শিরোমণি লঙ্কার রাজা সেজে সবাইকে যন্ত্রণা করেন, উনার সাথে আবার সবসময় একটাই চামচা থাকে! একি ঘটনা, একি ব্যাপার, সেই ঘুরেফিরে। সেই দিনতো এখন আর নেই, এখন গ্রামের মানুষ মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলে দিন-রাত, অনলাইনে বসে বসে হয়তো এই ব্লগ-ও পড়ছে, কে জানে! গ্রামের মানুষ এখন শার্ট প্যান্ট পরে বাজারে যায়। একটা গ্রামে এখন শুধু একজনই শিক্ষিত ছেলে থাকে না, আরও অনেক বেশী থাকে। সবকিছু বদলাচ্ছে, আমাদের নাটক কেন বদলাবে না? অবশ্যই গ্রাম নিয়ে চমৎকার কিছু নাটক হয় মাঝে মাঝে, কিন্তু তার সংখ্যা খুবই কম আর না হয় সেসব আমার রাডারে ধরা পড়ে না। অনেকদিন আগে একটা নাটকে দেখেছিলাম গ্রামের একজন দরিদ্র স্কুল শিক্ষককে নিয়ে, যার আদতে কোন স্কুলই ছিল না। তিনি গাছের নিচে ছাত্র পড়াতেন আর স্বপ্ন দেখতেন তিনি একদিন একটা স্কুল গড়বেন। তার সেই স্বপ্ন কোনদিনও পূরণ হয়নি। স্কুল হয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু তার শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব থাকার কারণে তিনি সেই স্কুলের শিক্ষক হতে পারেন নি। কাগজের সার্টিফিকেটের কাছে তার আন্তরিক ইচ্ছা হেরে গিয়েছিলো।

নাটক এমন হওয়া উচিত যেটা আমাদের ভাবতে শেখায়, যেটা আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে শেখায় না। আমরা সাধারণ দর্শকরা যদি নাটকের সাথে নিজেদের জীবন সম্পৃক্ত করতে নাই পারি, তাহলে নাটকের সেই গোপন এবং মহান জ্ঞানের বানী (যেসব নাট্যকাররা আমাদের ঠেসে ধরে গেলাতে চান) কোনদিনও আমাদের কানে এসে ঢুকবে না। আমরাতো ভেবে নিবো, “হেহ! ধুরও এইটা তো নাটক, নাটকতো নাটকই, নাটকে কিনা বলে ছাগলে কিনা খায়”।

আমি আস্তে আস্তে শ্যাম্পু হয়ে যাচ্ছি। এক চামচ শ্যাম্পু দিয়ে যেমন এক বালতি ফেনা হয়, আমিও একটা কথা বলতে গিয়ে তেত্রিশটা কথা বলে ফেলি। শুধু একটা গান পোস্ট করতে এসেছিলাম, কত কিছু লিখে ফেললাম হুড়মুড় করে। যাই হোক, গানের কথায় আসি। ‘উপসংহার’ নাটকের গান। উপসংহার নাটকটা দেখে খুবই ভালো লেগেছিল। স্বাভাবিক এবং স্বার্থপর মানুষের গল্প নিয়ে নাটক। নাটক আমার খুব একটা মনে থাকে না, দেখি আবার ভুলে যাই। তবে এই নাটকের কাহিনী আমি এখনও মনে করতে পারি, নামটাও মনে আছে। নাটকের শেষে এই গানটা ছিল, “মুছে গেছে সব দেনা-পাওনার স্মৃতি”। গানটা আসলেও দারুণ নাকি নাটকের জন্যই গানটা দারুণ লেগেছিল জানি না। হুট করে শুনলে অতটা ভালো নাও লাগতে পারে। আজ অনেকদিন পর YouTube-এ গানটা পেলাম। ছেপে দিলাম।

দ্বিতীয় গানটা একটা বিখ্যাত লালনগীতি। দুটো গানই ‘লালন’ ব্যান্ডের।

Band: Lalon
Album: Biprotip
Track: Biprotip 2003

Download mp3, Download slow version (Biprotip 2007 mp3)

Band: Lalon
Album: Birotip
Track: Jaat Gelo Download Mp3